সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

গাজায় গণহত্যা বন্ধে আইসিজের নির্দেশকে স্বাগত জানাই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজায় গণহত্যা বন্ধে আইসিজের নির্দেশকে স্বাগত জানাই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বদেশ ডেস্ক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) শুক্রবার ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধে যে রায় দিয়েছেন, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন বাংলাদেশ’র ভাইস-চেয়ার লেবার পার্টির এমপি বীরেন্দ্র শর্মার নেতৃত্বে চার এমপিসহ আট সদস্যের প্রতিনিধিদল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আইসিজের রায় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ রায়কে আমরা ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছি।

আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনি যে গণহত্যা হচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেটি বন্ধ করার ক্ষেত্রে এ রায় সহায়ক হবে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি কূটনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। আমরা আশা করি, ইসরায়েল আইসিজের রায় মেনে চলবে এবং গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’ 

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে মন্ত্রী জানান, ‘তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

তারা বলেছেন, ১০ বছর আগে যখন ঢাকায় এসেছিলাম, তখন ট্রাফিক জ্যাম পোহাতে হয়েছিল। আজ বিমানবন্দর থেকে খুব সহজেই এখানে চলে আসতে পেরেছি। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কারণেই সম্ভব হয়েছে।’ 

হাছান মাহমুদ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

দেশটি বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। আমাদের দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ রয়েছে ইউকে’র। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ এমপিবৃন্দ সফরে এসেছেন। এ দেশের সংসদের সঙ্গে ইউকে সংসদের সম্পর্ক আরো বৃদ্ধিও এই সফরের উদ্দেশ্য।’ 

আলোচনায় রোহিঙ্গা-রাখাইন পরিস্থিতি
এ ছাড়া রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান।

তারাও আমাদের সংগে একমত পোষণ করেছেন। কিছুদিন আগে ন্যাম সামিটে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে এ বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, সেটিও আজকের বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।’ 

রাখাইনে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দেশের অবস্থান প্রশ্নে হাছান বলেন, ‘এই উত্তেজক পরিস্থিতি কিছু দিন ধরেই চলছে। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আছেন। আমরা এ বিষয়ে সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে যদি মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে।’

নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিপুলসংখক রোহিঙ্গার কারণে ইতিমধ্যেই আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩৫ হাজার করে রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মানবিক কারণে তখন আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। আমরা মনে করি, মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

দেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আলোচনা
বাংলাদেশে ইউকের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি এবং আইসিটি খাতে বিনিয়োগ করার যে সুযোগ রয়েছে, এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ দুটো খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন এবং অনেকের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহও তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমাদের কৃষি খাতে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে যান্ত্রিকীকরণে। ১৫ বছর আগে হালের বলদ দিয়ে চাষাবাদ করা হতো। এখন হয় না, কদাচিৎ দেখা যায়। আগে ধান মাড়াই কিভাবে হতো, এটি এখন আমরা ছবিতে বা ভিডিওতে দেখি। এখন ধান মাড়াই হয় আধুনিক পদ্ধতিতে।’

বৈঠকে উপস্থিত পাঁচ দিনের সফরে আসা যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের অন্য সদস্যরা হলেন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ও সাবেক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অর্থনীতি মন্ত্রী পল স্কালি, লেবার পার্টির এমপি ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিলেক্ট কমিটির সদস্য নিল কোয়েল, বিরোধীদলীয় (লেবার পার্টি) হুইপ লেবার পার্টির এন্ড্রু ওয়েস্টার্ন।

একই সঙ্গে সফররত হাউস অব কমন্সের সিনিয়র পার্লামেন্টারি এসিস্ট্যান্ট ডোমিনিক মোফিট, কুইনস কমনওয়েলথ ট্রাস্টের উপদেষ্টা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান কানেক্ট চেয়ারম্যান জিল্লুর হুসেইন ও কানেক্টের প্রধান নির্বাহী ড. ইভলিনা বানায়ালিভা এবং কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সুমন চৌধুরী বৈঠকে যোগ দেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877